এআই (AI) আমাদের বন্ধু না শত্রু? কি বলছে গবেষণা জানুন বিস্তারিত


আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) যেন এক ঝড়ের মতো গ্রাস করছে বিশ্বটাকে। চিকিৎসা থেকে শুরু করে শিল্প পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে এর ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু এই দ্রুতগতির উন্নয়নই আমাদের মনে একটা প্রশ্ন জাগিয়েছে - এআই কি ভবিষ্যতে আমাদের চাকরি কেড়ে নেবে? গবেষণা কিছুটা আশ্বাস দিলেও, পুরোপুরি নিশ্চিন্ত থাকা যায় না।

এটা ঠিক যে, এআই বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের কাজকে সহজ করে দিচ্ছে। যেমন, রোবটরা এখন কারখানায় জটিল কাজ সামলাচ্ছে, ডাক্তারদের রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করছে, এমনকি গ্রাহক সেবায় চ্যাটবটরা মানুষের মতোই কথা বলছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IFM) বলছে, এআই প্রায় 40% চাকরিকে প্রভাবিত করবে। কিন্তু এটাও বিবেচনা করতে হবে যে, এআই নতুন ধরনের চাকরির সুযোগও তৈরি করবে। এআই ডেটা বিশ্লেষক, এআই ইঞ্জিনিয়ার, সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ, এআই নৈতিকতা বিশেষজ্ঞ - এই ধরনের পদগুলির চাহিদা বাড়বে। তাই চাকরি হারানোর চেয়ে, চাকরির ধরন বদলানোটাই বেশি সম্ভাব্য।

যদিও, সবাই সমানভাবে প্রভাবিত হবে না। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত অর্থনীতির দেশগুলিতে এআই-এর প্রভাব বেশি হতে পারে, সেখানে 60% পর্যন্ত চাকরি প্রভাবিত হতে পারে। অন্যদিকে, কম আয়ের দেশগুলিতে এই সংখ্যাটা কম হতে পারে। কিন্তু সামাজিক বৈষম্য বাড়ার আশঙ্কা সর্বত্রই আছে। কম দক্ষ এবং কম শিক্ষিত মানুষেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।

তাই এখনই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। সরকার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে এআই-সম্পর্কিত দক্ষতা অর্জনে মানুষকে সহায়তা করতে হবে। নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করা, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, এবং এআই নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। এছাড়াও, ব্যক্তিগত পর্যায়েও উদ্যোগ নেওয়া যায়। ক্রমাগত নতুন জিনিস শেখা, নিজের দক্ষতা বাড়ানো, এবং নমনীয় হওয়া আমাদের এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে চলতে সাহায্য করবে।

তবে, এআই-এর প্রভাব সব জায়গায় সমান হবে না। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলিতে, যেখানে অটোমেশন ইতিমধ্যেই বেশি প্রবল, সেখানে 60% পর্যন্ত চাকরি প্রভাবিত হতে পারে। অন্যদিকে, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এআই নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এআই কৃষিকাজকে আরও দক্ষ করে তুলতে পারে, যা কৃষি খাতে নতুন চাকরির সৃষ্টি করতে পারে।

এছাড়াও, এআই-এর প্রভাব বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়িয়ে দিতে পারে। কম দক্ষ এবং কম শিক্ষিত মানুষেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, যারা কারখানায় কাজ করেন তাদের চাকরি হারানোর ঝুঁকি বেশি।

তাই, এআই-এর এই প্রভাব মোকাবেলায় সরকার এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া জরুরি। সরকারকে দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি চালু করা, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, এবং এআই নীতিমালা প্রয়োগ করা প্রয়োজন। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এআই ব্যবহার করে নতুন পণ্য ও সেবা তৈরি করতে হবে, এবং কর্মীদের এআই-সম্পর্কিত দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করতে হবে।

শেষ পর্যন্ত, এআই একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি যা আমাদের জীবনযাত্রাকে আমূল বদলে দিচ্ছে। এটি আমাদের চাকরি, অর্থনীতি, এবং সমাজকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং প্রস্তুত থাকা জরুরি।
নবীনতর পূর্বতন